একটি পরিবার বেড়াতে যায় এবং তাদের যাত্রা থামে সোহাগী রেলওয়ে স্টেশনে। ট্রেন থেকে নেমে তারা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, আর সেখান থেকেই গল্পের সূচনা।
পরিবারের কর্তা একজন পুলিশ আইজি, যিনি দৃঢ় এবং কর্তৃত্বপরায়ণ। তার সঙ্গে রয়েছেন তার স্ত্রী, দুই মেয়ে নিশাত ও দিলশাদ, দূরসম্পর্কের আত্মীয় জামিল, সর্বদা পাশে থাকা ওসি কামরুল, একজন বিশ্বস্ত চাকর এবং নিশাতের মেয়ের দেখাশোনার জন্য নিযুক্ত এক মহিলা। যাত্রাপথে তাদের সঙ্গী হয় সাব্বির, একজন প্রতিভাবান ফটোগ্রাফার, যিনি সদ্য বিদেশ থেকে ফিরেছেন। নিশাতের মা চেয়েছেন তার সঙ্গে নিশাতের নতুন জীবন শুরু হোক। কিন্তু নিশাত, স্বামীর মৃত্যুতে ভেঙে পড়া মেয়ে, নিজের ভিতরে এমন এক অদৃশ্য দেয়াল তুলে রেখেছে, যা তার মাকেও ভীত করে তোলে।
নিশাতের ছোটবেলা থেকেই জামিলের সঙ্গে গভীর পরিচয় এবং এক ধরনের আবেগের সম্পর্ক রয়েছে, যদিও সে কখনো তা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেনি। অন্যদিকে, জামিলের মনে নিশাতের প্রতি অটুট ভালোবাসা, যা সে সবসময় লুকিয়ে রেখেছে।
ছোট মেয়ে দিলশাদ, সবার আদরের দিলু, চঞ্চল স্বভাবের জন্য প্রায়ই মায়ের বকুনি খায়। সে সরল মনে জামিলের সঙ্গে মিশতে ভালোবাসে, তার সাহচর্যে মুগ্ধ হয়ে সে মনেপ্রাণে তার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে। কিন্তু জামিলের বয়স তার চেয়ে অনেক বেশি এবং পরিবারের চোখে এই সখ্যতা সঙ্গত নয়।
জামিল পড়াশোনায় তেমন অগ্রগামী নয় (অনার্স থার্ড ক্লাস) বলে পরিবারে তার অবস্থান উপেক্ষিত, তবু পরিবারের সব দুঃখসুখের নীরব সাক্ষী সে-ই। অন্যদিকে, সাব্বির তার প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্ব দিয়ে সবার মন জয় করে ফেলে, এমনকি জামিলও তাকে পছন্দ করতে শুরু করে। সাব্বির নিশাতের প্রতি আকৃষ্ট হলেও নিশাত তাকে উপেক্ষা করে চলে, আর জামিলের মনে নীরবে জমতে থাকে অজানা রাগ ও অভিমান।
নিশাতের মনোজগত রহস্যময় এক গোলকধাঁধা, যেখানে অনুভূতির টানাপোড়েনে সে নিজেই হারিয়ে যায়। তার মনের দ্বন্দ্ব কেউ ঠিকমতো বুঝতে পারে না, এমনকি সে নিজেও নয়। অন্যদিকে, দিলু তার অল্প বয়সের আবেগে অনেক ঘটনায় অযৌক্তিক প্রতিক্রিয়া দেখায়, যা ধীরে ধীরে এক গভীর ট্র্যাজেডির দিকে নিয়ে যায়।
এক রাতে নিশাত তার কৈশোরের এক গোপন গল্প শোনায় দিলুকে—সে জানায়, সে চেয়েছিল জামিলের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করতে, কিন্তু পরিস্থিতির চাপে কবিরের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। নিশাতের এই স্বীকারোক্তি দিলুর হৃদয়ে গভীর আঘাত হানে। তার স্বপ্ন ভেঙে যায়, মন ভরে ওঠে বেদনার কালো মেঘে।
পরদিন সকালে, সোহাগী স্টেশনের নিস্তব্ধতাকে ভেঙে দিয়ে ভেসে ওঠে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য—দিলুর নিথর দেহ পানিতে ভাসছে। পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া, আর সব সম্পর্কের জটিলতা মিশে যায় বেদনার অথই স্রোতে।
Reviews
Clear filtersThere are no reviews yet.